গবেষণাও আনন্দের হয়

প্রতিকী ছবি
গবেষণা মানেই কি একগাদা তথ্য, হিসাব, সংখ্যা, চুলচেরা বিশ্লেষণে ডুবে মাথার চুল ছেঁড়া? কেবল কাগজ আর কম্পিউটারে মুখ গুঁজে নির্ঘুম রাত কাটানো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, যাঁরা গবেষণা করছেন বা করেছেন, তাঁরা কিন্তু বলছেন—এর মধ্যে একটা আনন্দ আছে। কী সেই আনন্দ? এ নিয়েই আমাদের আজকের এই লেখা...
কথাটা বলেছিলেন সম্ভবত চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস। ‘যদি যা ভালোবাসো, তা-ই করো, তাহলে জীবনে এক দিনের জন্যও তোমাকে কাজ করতে হবে না।’ গবেষণা প্রসঙ্গে নানা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই কথাই মনে পড়ল। গবেষণা যাঁদের পছন্দের বিষয় কিংবা পছন্দের বিষয় নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, নিঃসন্দেহে কাজটা তাঁরা উপভোগ করেন। হাজার তথ্যের ভারে কখনো যে ত্রাহি ত্রাহি দশা হয় না, তা নয়। কিন্তু তবু গবেষণার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। শিক্ষার্থীদের কথা বলব। আগে শিক্ষকেরা কী বলেন, শোনা যাক।
শিক্ষকেরা বলেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের মতে, ‘গবেষণা সম্পর্কে একটা ধারণা আছে যে এটি নীরস, তথ্য-বিশ্লেষণের ভারে ও রেফারেন্স-টীকা-টিপ্পনীতে ভারাক্রান্ত। কিন্তু গবেষণার বিষয়বস্তু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারলে ও গবেষণার পদ্ধতি ঠিকঠাক নির্বাচন করা গেলে গবেষণা করা ও অভিসন্দর্ভ পাঠ করা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে। গবেষণা প্রশ্নকে মাথায় রেখে তথ্য সংগ্রহের পরে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফলাফল উপস্থাপনের পুরো প্রক্রিয়াটিতেই আবিষ্কারের রোমাঞ্চ কাজ করে। তবে পূর্বশর্ত একটাই, গবেষককে খোদ গবেষণা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যমান জ্ঞান ব্যবহার করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টিই গবেষণার উদ্দেশ্য। গবেষণার জগতে তাই শিক্ষক ও ছাত্র এক হয়ে যায়, এই জন্যই তাঁদের ডাকা হয় সিনিয়র স্কলার ও জুনিয়র স্কলার নামে। গবেষণার নিত্যনতুন জ্ঞান, আর সত্যকে প্রমাণসহ উদ্ঘাটনের মধ্যে কবি নজরুলের “সৃষ্টি–সুখের উল্লাস” খুঁজে পাওয়া যায়।’
আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আমির হোসেন ভূঁইয়ার মতে, ‘গবেষণা একটা সাধনা, শিল্প, কৌশল। একজন গবেষকের কাছে এটা একটা খেলার মতো, গবেষণার কোনো ফলাফলই নিরর্থক বা অপ্রয়োজনীয় নয়, বরং প্রতিটি ফলাফলই তাৎপর্যপূর্ণ এবং তা গবেষককে আনন্দিত করে।’
শিক্ষার্থীদের কয়েকটি গবেষণা
কত বিচিত্র বিষয়ে যে গবেষণা হতে পারে! এসব গবেষণা একজন গবেষকের জন্য যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি পাঠকের জন্যও কৌতূহল জাগানিয়া হতে পারে। কী নিয়ে গবেষণা করছেন এখনকার শিক্ষার্থীরা? কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আমরা জানতে চেষ্টা করেছি।
দক্ষদের অবদান কম
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র রাকিব বিন শহীদ ২০১৭ সালে প্রথমে একটা মাত্রিক (কোয়ান্টিটেটিভ) গবেষণা করে দেখেন যে অদক্ষ শ্রমিকের তুলনায় দক্ষ শ্রমিকের বিদেশে যাওয়ার হার বেশি হলেও রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে অদক্ষ শ্রমিকেরাই বেশি এগিয়ে। রাকিবের ভাষায়, ‘বিষয়টি আমাকে কৌতূহলী করে। আমি পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখি, যাঁরা দক্ষ শ্রমিক, তাঁরা মূলত উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বিদেশে যান ভালো সুযোগ ও উন্নত জীবনযাপনের আশায়। তাঁদের বেশির ভাগই উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের, তাই দেশে টাকা পাঠানোর প্রয়োজনীয়তাও থাকে না। উন্নত দেশে অভিবাসনের সুযোগ পাওয়ার জন্য এবং পরিবার নিয়ে স্থায়ী হওয়ার জন্যই তাঁরা আগ্রহী ও তৎপর থাকেন।’
রাকিবের গবেষণাটি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ সিম্পোজিয়ামে রানারআপ পুরস্কার জিতেছে।
মওকা মওকা
‘খেলাধুলা ও গণমাধ্যম’ শিরোনামের গবেষণাটি শেষ হয় ২০১৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিনা তানিন গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তানিন জানান, ক্রীড়া নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন ‘মওকা মওকা’ ভিডিওর মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে একধরনের বাগ্যুদ্ধ শুরু হলো, নানা রকম ট্রল তৈরি হতে লাগল, বিষয়টি তাঁকে আগ্রহী করেছে। ইউটিউবের ভিডিও, মানুষের মন্তব্য ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন এই গবেষক। গবেষণাপত্রের অংশবিশেষ ২০১৮ সালে ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে।
এই গবেষণায় বিজ্ঞাপনশিল্প ও ক্রীড়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, বর্ণবাদ ও খেলাধুলা, ব্র্যান্ডিং, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও জনসংস্কৃতি, বিজ্ঞাপনে নারী খেলোয়াড়, গণমাধ্যমে নারী খেলোয়াড়ের দৈহিক গঠন ও ট্রিটমেন্ট, স্টেডিয়ামে প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি প্রভৃতি বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
শিক্ষা সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়মিত পেতে রেজিস্ট্রেশন করুন অথবা Log In করুন।
Account Benefitস্লিম ফিগারের মোহ
ভিন্ন রকম বা মজার গবেষণার খোঁজে আমরা গিয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে নৃতত্ত্ব বিভাগের সেমিনারে পাওয়া যায় দারুণ সব গবেষণার সন্ধান। কয়েকটি উল্টে–পাল্টে দেখতে চাইলে লাইব্রেরিয়ান মো. আবদুল খালেক সামনেই আরেকটি ঘরের তালা খুলে দেন। বিশাল ঘরটি কেবল গবেষণাপত্রের জন্যই বরাদ্দ। একটি গবেষণাপত্র নজর কাড়ল। ওজন কমানোর জন্য বা ক্ষীণকায় হওয়ার জন্য অনেক নারীর যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, এর পেছনে কোন বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক, সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা ছিল গবেষণায়।
গবেষক সাভারের বিভিন্ন জিমনেসিয়ামে যাওয়া নারীদের নিবিড় সাক্ষাৎকার গ্রহণ পদ্ধতিতে ‘স্লেন্ডারনেস আইডল’ (আদর্শ ক্ষীণকায়) দ্বারা তাড়িত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। যেখানে দেখা গেছে নারীরা সুন্দর দেখাতে, স্বামীকে খুশি করতে, বন্ধুদের টিপ্পনী থেকে বাঁচতে বা বলিউড নায়িকাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অথচ একজনও বলেননি স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা!
এ ছাড়া এই গবেষণায় ওজন হ্রাস প্রবণতার পারিবারিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ, মোটা ও চিকন স্বাস্থ্যের পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব, চিকন দেহের পরিবেশনায় মিডিয়া ও চলচ্চিত্র, স্লিম ফিগারের ডিসকোর্সে পুঁজিবাদ ও পুরুষতন্ত্রের অবস্থান প্রভৃতি বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পটের গান থেকেই আজকের চলচ্চিত্র?
‘বাংলার পটের গান: বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটি উপেক্ষিত অধ্যায় উন্মোচন’ শিরোনামে সাজেদুল ইসলাম ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ফেলোশিপ-২০১৯’–এর গবেষণার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
চলচ্চিত্র নিয়ে এত বিষয় থাকতে পটের গান কেন? প্রশ্ন করতেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী ও গবেষক বলেন, ‘পৃথিবীর চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ম্যাজিক লণ্ঠনকে চলচ্চিত্রের আদিরূপ ধরা হয়েছে, কিন্তু তারও প্রায় এক হাজার বছর আগেই পঞ্চম বা সপ্তম শতাব্দী থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে পটের গানের প্রচলন ছিল, যেটিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে গেছে আধিপত্যশীল শাসকদের লেখা ইতিহাস। চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সঙ্গে পটের গানের আদি সম্পর্কের অনুসন্ধান করতেই আমার এই গবেষণার সূত্রপাত।’ এ মাসে নিবিড় সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য তাঁকে যেতে হচ্ছে ভারতের মেদিনীপুর। অনেক দিন ধরে দূরে কোথাও ভ্রমণের ইচ্ছাটা কাজের সুবাদে হলেও পূরণ হচ্ছে বলে রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত এই গবেষক।
কেন করব গবেষণা?
কেন গবেষণা করব—এই প্রশ্নের মধ্যেই কিন্তু উত্তরটা লুকিয়ে আছে। ওই যে—কেন! এই ‘কেন’ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতেই তো গবেষণা। গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস একবার বলেছিলেন, ‘আপনি কখনোই এক নদীতে দুবার পা রাখতে পারবেন না। কেননা, দ্বিতীয়বার যখন পা রাখবেন, তখন নদীও খানিকটা পরিবর্তিত হয়েছে, সঙ্গে আপনিও!’ এই যে পরিবর্তন, এটা ধরতে পারাই গবেষণা। একাডেমিকভাবে বা ক্যারিয়ারের জন্যও গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন?
* কোনো কোনো চাকরির ক্ষেত্রে গবেষণা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। আবার গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকাই কোনো কোনো চাকরিতে আবেদনের পূর্বশর্ত। যেমন আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান, গবেষণার অভিজ্ঞতা আপনার থাকতে হবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনি যোগ দিতে পারবেন বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিভাগে।
* বিদেশে উচ্চশিক্ষার বা ভালো চাকরির জন্য পরীক্ষার নম্বর বা সিজিপিএ যখন কথা বলবে, আপনার গবেষণাপত্র সেখানে রীতিমতো চিৎকার করে আপনার যোগ্যতার প্রমাণ দেবে!
* গবেষণা করতে গেলে যে বিরাট ডিগ্রিধারী হতে হবে, সিজিপিএ চারে-চার হতে হবে, কিংবা আলুর বদলে চশমা সেদ্ধ করার মতো ভুলোমন থাকতে হবে—এমন নয়। শুধু ধৈর্য আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই সেটা সম্ভব। দারুণ কোনো গবেষণা আপনাকে এনে দিতে পারে অভাবনীয় কোনো স্বীকৃতি।
* ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা শুধু নৈতিক—যে কোনো সমস্যায় সমাধান খোঁজার একটা উপায় হলো গবেষণা। অতএব এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে উঠতে পারে আপনার মধ্যে।
সূত্র: প্র/আ
- মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
- এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট কোর্স- ইংলিশ, চাইনিজ, আরবি, ফ্রেঞ্চ
- বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিজ্ঞপ্তি
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর
- খুবির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন ২২ ডিসেম্বর
- জবির সমাবর্তন ১১ জানুয়ারি
- জবিতে শূন্য আসনে ভর্তির সাক্ষাৎকার শুরু ২০ ডিসেম্বর
- রাবিতে আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন শুরু বৃহস্পতিবার
- অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ১৩ জানুয়ারি; মাস্টার্স রিলিজ স্লিপ আবেদন শুরু ১৯ ডিসেম্বর
- ডিজিটাল মেলা-২০২০ উপলক্ষে টেলিকমিউনিকেশন দফতরের রচনা প্রতিযোগিতা
- ঢাকা পলিটেকনিকে জানুয়ারি-জুন’২০ সেশনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি শুরু
- জেএসসি-পিইসির ফল বছরের শেষ দিন
- ৪০তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষা ৪-৮ জানুয়ারি
- তিতুমীর কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের নিবন্ধন শেষ আজ
Submit Your Comments: