টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় ল্যাব ক্লাস সমুহকে কার্যকর করণের নতুন পদ্ধতি

প্রতিকী ছবি
যেকোনো ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের ল্যাব ক্লাসে কার্যকর ও ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংও তার ব্যতিক্রম নয়। শুধুমাত্র ল্যাব ক্লাসের মাধ্যমেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবিষয়ের অধ্যায়গুলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা লাভ করতে পারে। আর এটার জন্য দরকার নিজ হাতে ব্যবহারিক ক্লাসের কাজগুলি সম্পন্ন করা। কিন্তু নিজ হাতে কাজ করতে হলে একই যন্ত্র অনেকগুলি থাকতে হবে যেটা বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না।
তবে ডাইং, প্রিন্টিং এবং ফিনিশিং ল্যাবে প্রয়োজনীয় রঙ ও রাসায়নিক দ্রব্য, কাঁচের সরঞ্জামাদি যেমন বিকার, টেস্ট টিউব ইত্যাদি তুলনামূলকভাবে সস্থা ও আকারে ছোট এবং ল্যাবে বেশী জায়গার প্রয়োজন হয়না বিধায় প্রায় প্রতিটি ছাত্রেরই নিজ হাতে ল্যাবের কাজগুলি করা সম্ভব হয়ে থাকে। গার্মেন্টস ল্যাবেও ঠিক অনেকটা তাই অর্থাৎ ছাত্রদের নিজ হাতেই ল্যাব কর্মকান্ড করা সম্ভব হয়ে থাকে।
কিন্তু বেশ কিছু ল্যাব যেমন- স্পিনিং, উইভিং, নিটিং ও টেক্সটাইল টেস্টিং ইত্যাদির জন্য যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ উক্ত ল্যাব সমূহে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলি একটির বেশি ক্রয় করেনা বা কেনার সামর্থ্য রাখেনা।
ফলে এইসব ল্যাবে ব্যবহারকি ক্লাস করার ক্ষেত্রে সকল শিক্ষার্থীকে (ক্ষেত্র বিশেষ ২০-৩০ জন বা তার বেশি) একটি মেশিন একসাথে ক্লাস করতে হয়।
ফলে দেখা যায়, এসব ল্যাব ক্লাসে প্রত্যক শিক্ষার্থীর পক্ষে হাতে-কলমে শেখাটা সম্ভব হয়ে উঠেনা। এসব ক্লাসের গুটিকয়েক শিক্ষার্থী যন্ত্র ব্যবহার করে হাতে-কলমে শিখতে পারছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হাতে কলমে শিখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এবং যারা কিছুটা অমনোযোগী এবংলেখা পড়ায় আগ্রহ কম তাদরেক্ষেত্রে ল্যাব ক্লাস একেবারেই অকার্যকর থেকে যাচ্ছে। তারা তেমন একটা শিখতে পারছে না।
ফলস্বরূপ, একটি বড় অংশের শিক্ষার্থী ল্যাব ক্লাসের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সমস্যাকে বিবেচনায় রেখে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বালাদেশের টেক্সটাইল শিক্ষাঙ্গনে একটি নতুন ল্যাব ক্লাস পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে যা নিম্নে র্বণনা করা হলো।
ধারনাটি হচ্ছে, আগে প্রতিদিন প্রতি ল্যাব সেশনে একটি এক্সপরেমিন্টে করান হত এবং প্রতি সেমিস্টারের এ ধরণরে প্রায় ১২-১৫ টি এক্সপরেমিন্টে করান হয়ে থাকে। নতুন পদ্ধতিতে প্রতিদিন প্রতি ল্যাব সেশনে সবগুলি এক্সপরিমেন্ট র্অথাৎ ১২-১৫ টি এক্সপরেমিন্টে করান হবে। এই লক্ষে ক্লাসের সব শিক্ষার্থীকে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়। সর্বোচ্চ তিন/ চারজন শিক্ষার্থী মিলে একটি গ্রুপ হয় এবং প্রত্যেকে গ্রুপ কোনো একটি যন্ত্রে আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষণীয় বিষয়ের ওপর হাতে-কলমে দীক্ষা অর্জন করবে। ঠিক পরের ল্যাব ক্লাসে এই গ্রুপটি ভিন্ন কোনো বিষয়ে অন্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরীক্ষা চালাবে।
এরফলে প্রত্যেক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক সেমিস্টারে, ধরা যাক ১৩ সপ্তাহে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন এক্সপরেমিন্টে হাতে-কলমে শিখতে পারবে, যেটা তারা আগে পারতোনা বা সম্ভব ছিলনা
যেহেতু সরাসরি ল্যাবে অংশগ্রহণ সম্ভব ছিলনা এ কারনে অতীতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা ল্যাব ক্লাসে হাতে-কলমে কাজ করার পরিবর্তে তাকিয়ে দেখা বা গল্পগুজব করে সময় কাটাত। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ল্যাব ক্লাসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এই নতুন পদ্ধতির ল্যাব ক্লাস এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যে এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং সমাধান করতে হয়। এখানে অন্য কারো দেখে কপি বা নকল করার সুযোগ নেই। সর্বোপরি ল্যাব ক্লাস বর্জন বা অবজ্ঞা করারও কোনো সুযোগ নেই। আরো একটি বিষয় যদি কেউ একটি ক্লাস মিস করে তাহলে সে পরবর্তীতে সেটা সহজেই করে নিতে পারবে।
শিক্ষা সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়মিত পেতে রেজিস্ট্রেশন করুন অথবা Log In করুন।
Account Benefitনতুন এই ক্লাস পদ্ধতিটি চালু করতে গিয়ে পরিচালনা কার্যক্রমে কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে সফলভাবে সমাধান করা গেছে।
আগে, একজন শিক্ষক পুরো ল্যাব ক্লাস একাই পরিচালনা করতেন। কারণ তখন একটি ক্লাসে একটিমাত্র এক্সপরেমিন্টে হাতেকলমে শেখানো হতো। কিন্তু নতুন ল্যাব ক্লাস পদ্ধতিতে একইসময়ে ১২-১৫টি এক্সপরেমিন্টে চলমান থাকে, ফলে একজন শিক্ষকের পক্ষে পুরো ক্লাস সামলানো কঠিন। এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে দুটি উপায়ে। এক. প্রথম দিকে পর পর দুইটি ল্যাব ক্লাসে সাধারণ তাত্ত্বিক ক্লাসের মতো সব শিক্ষার্থীকে সেমিস্টারের সবগুলো এক্সপরেমিন্টে কভিাবে করতে হবে সে ব্যাপারে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই ক্লাসগুলিতে শিক্ষকরা ল্যাব শিট, ল্যাবের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার কাগজপত্র, ডাটা এনালিসিস করা ইত্যাদি শিক্ষার্থীদেরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং শিক্ষার্থীরা ল্যাব ক্লাস শুরুর আগেই ল্যাব ক্লাসের কার্যাবলী সম্পর্কে একটি পুর্ণাঙ্গ ধারনা পায়। দুই. সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ প্রত্যেক ল্যাব পরীক্ষার ভিডিও তৈরি করে পরে তা ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়।
এতে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে তাদের ল্যাব ক্লাস করার সময় পুনরায় দেখতে পারে এবং শিক্ষকের ব্যাপক সাহায্য ছাড়াই ল্যাব ক্লাসে করণীয় বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে পারে। আরো একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল এই নতুন ল্যাব ক্লাস পদ্ধতিতে।
সেটা হলো যেহেতু প্রথম ল্যাব ক্লাসেই সবগুলি (১২-১৫) এক্সপরেমিন্টে করানো হয় র্অথাৎ শেষে তাত্তিক ক্লা্সের বিষয় গুলো প্রথম ক্লাসে পড়ানো হয়। ফলে দেখা যায়, তাত্ত্বিক ক্লাসে এখনো পড়ানো হয়নি এমন বিষয়গুলি, একটু দুর্বল শিক্ষার্থীর কাছে, অপরিচিত মনে হয়। আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি কোর্স কারিকুলাম নতুনভাবে বিন্যাস করার মাধ্যমে। যে সেমিস্টারে তাত্ত্বিক ক্লাস রয়েছে, ঠিক তার পরের সেমিস্টারেরই ওই তাত্ত্বিক ক্লাসের সম্পূরক ল্যাব ক্লাস গুলি রাখা হয়েছে। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাস পরপর দুই সেমিস্টারে হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে জ্ঞানার্জন কার্যকর এবং উপকারী হবে বলে আশা করা যায়।
আশা করা যায়, দেশের সকল টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই নতুন ল্যাব পদ্ধতি কার্যকর করতে পারলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ানিংয়ের অধিত বিষয়গুলো কার্যকরভাবে হাতেকলমে শিখতে পারবে। এতদব্যততি নতুন এই পদ্ধতির ডাটা সংগ্রহ, ডাটা এনালাইসিস সহ যাবতীয় কার্যাদি এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যে কোনো শিক্ষার্থীই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ল্যাব ক্লাস ফাঁকি দিতে পারবে না।
ফলে তারা শিখতে পারবে অনেক বেশি। তারা নিজহাতে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ফলে অনেক বেশি শিখতে পারে এবং নিজেদের দুর্বলতাগুলো সনাক্ত করার মাধ্যমে নিজেদের মেধাকে শানিত করতে পারে। আমরা আরো লক্ষ্য করে দেখেছি যে, ল্যাবের হাতে কলমে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। আর এই আত্মবিশ্বাসের কারনে কর্মজীবনে যখন তারা নতুন নতুন মেশিনে কাজ তখন তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ় না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে মেশিনের ক্রুটি নিরূপণ ও ক্রুটি মুক্ত করনের কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে বলে আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।
লেখক: অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুল হক, পিএইচডি
More detail about
Daffodil International University
- মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
- এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট কোর্স- ইংলিশ, চাইনিজ, আরবি, ফ্রেঞ্চ
- বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিজ্ঞপ্তি
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর
- খুবির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন ২২ ডিসেম্বর
- জবির সমাবর্তন ১১ জানুয়ারি
- জবিতে শূন্য আসনে ভর্তির সাক্ষাৎকার শুরু ২০ ডিসেম্বর
- রাবিতে আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন শুরু বৃহস্পতিবার
- অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ১৩ জানুয়ারি; মাস্টার্স রিলিজ স্লিপ আবেদন শুরু ১৯ ডিসেম্বর
- ডিজিটাল মেলা-২০২০ উপলক্ষে টেলিকমিউনিকেশন দফতরের রচনা প্রতিযোগিতা
- ঢাকা পলিটেকনিকে জানুয়ারি-জুন’২০ সেশনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি শুরু
- জেএসসি-পিইসির ফল বছরের শেষ দিন
- ৪০তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষা ৪-৮ জানুয়ারি
- তিতুমীর কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের নিবন্ধন শেষ আজ
Submit Your Comments: